এই শীতে মধু হচ্ছে আপনার শরীরের জন্য শ্রেষ্ঠ খাবার। জান্নাতের যেসব খাবার আল্লাহ তায়ালা দুনিয়াবাসীদের জন্য পাঠিয়েছেন,সেগুলোর মধ্যে মধু একটি । মধু আল্লাহর পক্ষ থেকে আসা একটি বিশেষ নেয়ামত। এতে রয়েছে অসংখ্য রোগের শেফা। স্বয়ং নবী করিম (সাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি প্রতি মাসে তিন দিন সকালে মধু চেটে খাবে, তার বড় ধরনের কোন রোগ হবে না।’ (ইবনে মাজাহ : ৩৪৪১)।

হাজারো গুণে ভরা মধুতে গ্লুকোজ ও ফ্রূকটোজ আছে,যা শরীরে শক্তি যোগায়।তাছাড়া এতে  অনেক প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদানও আছে। যেমন- এনজাইম বা উৎসেচক, খনিজ পদার্থ (যথা পটাশিয়াম, ক্যালশিয়াম, ফসফরাস, ম্যাঙ্গানিজ) ও প্রোটিন আছে। মধুতে কোনো কোলেস্টেরল নেই। তাই সুস্থ ও অসুস্থ যে কেউ ই মধু খেতে পারেন।

জেনে নিন লিচু ফুলের মধুর ৬ টি বৈশিষ্ট্যঃ (মধু কেনার আগে অবশ্যই এই তথ্য গুলো জেনে নেওয়া উচিত)

• দেখতে সাধারণত Light Amber রঙের হয় (তবে সময়, স্থান ও ঘন-পাতলার উপর নির্ভর করে কিছুটা Light বা Dark হতে পারে)।
• খেতে খুবই সুস্বাদু। মধু খাওয়ার সময় অনেক সময় মধুতে লিচু ফলের স্বাদ পাওয়া যায়।
• ঘ্রাণ টাও লিচু ফলের সাথে মিলে যায় (তবে মধু পুরাতন হলে স্বাদ এবং ঘ্রাণ কিছুটা পরিবর্তন দেখা যায়)।
• মধুর ঘনত্ব কম বা বেশি হতে পারে।
• মধু পাতলা হলে ফেনা হতে দেখা যায়। আর ঘনত্ব বেশি হলে ফেনা হতে দেখা যায় না।
• সাধারণত লিচু ফুলের খাঁটি মধু সামান্য জমতে দেখা যায়। যদি মধু পাতলা হয় তাহলে সেটা কয়েকমাস পরে সামান্য জমতে পারে। আর যদি মধু খুবই ঘন হয় তাহলে সেটা দ্রুত জমতে শুরু করে এবং সম্পূর্ণ মধুই জমে যেতে পারে বা বেশীরভাগ জমতে পারে।

মধুর অন্যান্য উপকারিতা সমূহঃ

•  সাধারানত নিরাময়ী লিচু মধুতে আছে প্রচুর পরিমাণে মিনারেল, ভিটামিন ও এনজাইম,যা শরীরকে বিভিন্ন অসুখ বিসুখ থেকে রক্ষা করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
• বাড়তি ওজন কমাতে সাহায্য করে নিরাময়ী লিচু মধু।তাছাড়া  নিরাময়ী লিচু মধু খেলে বুদ্ধি বাড়ে।
• নিরাময়ী লিচু মধু হৃৎপিণ্ডের সমস্যার ঝুঁকি হ্রাস করে।
•  নিরাময়ী লিচু মধুর সাথে দারচিনির গুঁড়ো মিশিয়ে খেলে তা রক্তনালীর বিভিন্ন সমস্যা দূর করে এবং রক্তনালী পরিষ্কার করতে সাহায্য করে এবং রক্তের খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমাণ ১০% পর্যন্ত কমিয়ে দেয়।
• যারা নিয়মিত হজমের সমস্যায় ভুগেন,তারা প্রতিদিন সকালে নিয়মিত নিরাময়ী লিচু মধু খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।এতে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।
• শরীরের শক্তি যোগাতে এবং শরীরকে কর্মক্ষম রাখতে সাহায্য করে নিরাময়ী লিচু মধু।
• যৌনশক্তি  বৃদ্ধিতে তথা নিয়মিত নিরাময়ী লিচু মধু সেবন করলে ধ্বজভঙ্গ রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
• নিরাময়ী লিচু মধু রক্ত পরিষ্কার করতে অনেক সাহায্য করে। তাছাড়া এটি রক্তনালীগুলোও পরিষ্কার করে থাকে।
• নিরাময়ী লিচু মধু হাঁপানি রোধেও সহায়তা করে।
• নিরাময়ী লিচু মধু গ্যাস্ট্রিক আলসার থেকে মুক্তিসহ হজম সমস্যার সমাধানেও কাজ করে মধু। একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, গ্যাস্ট্রিক আলসার থেকে মুক্তি পেতে একজন ব্যক্তি প্রতিদিন নিয়মিত তিন বেলা দুই চামচ করে মধু খেতে পারে। এতে করে গ্যাস্ট্রিক আলসার থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
• প্রতিদিন সকালে এক চামচনিরাময়ী লিচু মধু খেলে ঠান্ডা লাগা,কফ,কাশি ইত্যাদি সমস্যা কমে যায়।
• মন ভালো করতে প্রতিদিন হালকা গরম পানির সাথে নিরাময়ী লিচু মধু ও লেবুর রস মিশিয়ে খান। সঙ্গে একটু দারুচিনির গুঁড়াও ছিটিয়ে নিতে পারেন।
• প্রতিদিন সকালে খালি পেটে হালকা গরম পানিতে লেবুর রস ও নিরাময়ী লিচু মধু মিশিয়ে খেলে ওজন কমে যায় কিছুদিনের মধ্যেই। এছাড়াও এভাবে প্রতিদিন খেলে লিভার পরিষ্কার থাকে,শরীরের বিষাক্ত উপাদান গুলো বের হয়ে যায় এবং শরীরের মেদ গলে বের হয়ে যায়।
• নিরাময়ী লিচু মধুর সাথে দারুচিনির গুঁড়ো মিশিয়ে খেলে তা রক্তনালীর সমস্যা দূর করে এবং রক্তের খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমাণ ১০% পর্যন্ত কমিয়ে দেয়।
• নিরাময়ী লিচু মধু ও দারুচিনির মিশ্রণ নিয়মিত খেলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুকি কমে এবং যারা ইতিমধ্যেই একবার হার্ট অ্যাটাক করেছেন তাদের দ্বিতীয়বার অ্যাটাকের ঝুকি কমে যায়।
• হজমের সমস্যা থাকলে প্রতিদিন সকালে নিরাময়ী লিচু মধু খাওয়ার অভ্যাস করুন। প্রতিবার ভারী খাবারের আগে এক চামচ মধু খেয়ে নিন। বিশেষ করে সকালে খালি পেটে এক চামচ মধু খান।
• যারা সারাক্ষন দূর্বলতায় ভুগছেন তারা প্রতিদিন সকালে এক চামচ নিরাময়ী লিচু মধু খেয়ে নিন এবং সারা দিন সবল থাকুন।
• সকালে ত্বকে নিরাময়ী লিচু মধু লাগিয়ে ৩০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। এতে মধুর বেশ কিছু উপাদান ত্বক শুষে নেয়। ফলে ত্বক মসৃণ ও সুন্দর হয়।
• ত্বকে নিয়মিত নিরাময়ী লিচু মধু ব্যবহার করলে ত্বকের দাগও চলে যায়।
• অল্প গরম দুধের সঙ্গে নিরাময়ী লিচু মধু বেশ কার্যকরী।
• নিরাময়ী লিচু মধু  রোগ প্রতিরোধ শক্তি বৃদ্ধি করে, হার্টকে শক্তিশালী করে।
• নিরাময়ী লিচু মধু কোষ্ঠকাঠিন্য ও অনিদ্রা দূর করে, শারীরিক দূর্বলতা দূর করে এবং পাকস্থলী সুস্থ রাখে।

কিভাবে খাবেন: 

প্রনালী ১ : রক্ত পরিষ্কারক- এক গ্লাস হালকা গরম পানির সাথে এক বা দুই চামচ মধু এবং এক চামচ লেবুর রস মেশান। পেট খালি করার আগে প্রতিদিন এই মিশ্রিত পানি খান। এটা রক্ত পরিষ্কার করতে অনেক সাহায্য করে। তাছাড়া রক্তনালী গুলোও পরিষ্কার করে থাকে।

প্রনালী ২: হাঁপানি রোধে- আপনি যদি পারেন আধা গ্রাম গুঁড়ো করা গোলমরিচের সাথে সমপরিমাণ মধু এবং আদা মেশান। আপনি দিনে অন্তত তিন বার এই মিশ্রিত পানি খান। এটা হাঁপানি রোধে সহায়তা করবে।

প্রনালী ৩: সকালের নাস্তার সাথে প্রতিদিন ১/২ চামচ মধু পান করা উত্তম। এটি শরীরে তাৎক্ষণিক শক্তি যোগাবে।