প্রতিদিন এক গাদা ভিটামিন ট্যাবলেট খেতে খেতে হাপিয়ে যাচ্ছেন না তো,,,? প্রাকৃতিকভাবেই হোক “রোগের নিরাময়।”  মানসিক চাপমুক্ত ও রোগের প্রাকৃতিক প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলা এক আয়ুর্বেদীয় ভেষজ “নিরাময়ী আমলকি গুড়া।” আমলকি শুধু আজকের এই আধুনিক যুগেই নয় বরং সেই বৈদিক কাল থেকেই আয়ুর্বেদীয় ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। তাই আয়ুর্বেদে আমলকিকে বলা হয় অমৃতফল। কফ, বমি, অনিদ্রা, ব্যথা-বেদনায,ব্রঙ্কাইটিস, অ্যাজমা,রুচি বৃদ্ধি ও ক্ষিদে বাড়ানোসহ প্রাকৃতিকভাবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে নিরাময়ী আমলকি গুড়া। চলুন জেনে নেওয়া যাক নিরাময়ী আমলকি গুড়ার আরও গুরুত্বপূর্ন কিছু ভেষজ গুন,উপকারীতা ও এর অপকারীতাসমূহ।

নিরাময়ী আমলকি গুড়া

উপকারীতাসমূহ:

১.নিরাময়ী আমলকি গুড়া চুলের টনিক হিসেবে কাজ করে এবং চুলের পরিচর্যার ক্ষেত্রে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এটি যে শুধু চুলের গোড়া মজবুত করে তা নয়, বরং চুলের বৃদ্ধিতেও সাহায্য করে।

২. নিরাময়ী আমলকি গুড়া চুলের খুসকির সমস্যা দূর করে ও পাকা চুল প্রতিরোধ করে।

৩. নিরাময়ী আমলকি গুড়া কোষ্ঠকাঠিন্য ও পাইলসের সমস্যা দূর করতে পারে। এছাড়াও এটি পেটের গোলযোগ ও বদহজম রুখতে সাহায্য করে।

৪. এক গ্লাস দুধ বা জলের মধ্যে নিরাময়ী আমলকি গুড়া ও সামান্য চিনি মিশিয়ে দিনে দু’বার খেতে পারেন। অ্যাসিডিটির সমস্যা কম রাখতে সাহায্য করবে।

৫. নিরাময়ী আমলকি গুড়া এক গ্লাস জলে ভিজিয়ে খেলে হজম সমস্যা কেটে যাবে।

নিরাময়ী আমলকি গুড়া

৬. প্রতিদিন সকালে নিরাময়ী আমলকি গুড়ার সঙ্গে মধু মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে। এতে ত্বকের কালো দাগ দূর হবে ও ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়বে।

৭. নিরাময়ী আমলকি গুড়া দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। এছড়াও চোখের বিভিন্ন সমস্যা যেমন চোখের প্রদাহ,চোখ চুলকানি বা জল পড়ার সমস্যা থেকে মুক্তি দেয় নিরাময়ী আমলকি গুড়া।

৯. প্রতিদিন নিরাময়ী আমলকি গুড়ার রস খেলে নিঃশ্বাসের দুর্গন্ধ দূর হয় এবং দাঁত শক্ত থাকে।

১০. নিরাময়ী আমলকি গুড়া মুখে রুচি ও স্বাদ বাড়ায়। রুচি বৃদ্ধি ও খিদে বাড়ানোর জন্য আমলকি গুঁড়োর সঙ্গে সামান্য মধু ও মাখন মিশিয়ে খাওয়ার আগে খেতে পারেন।

১১. নিরাময়ী আমলকি গুড়া রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং মানসিক চাপ কমায়।

১২. কফ, বমি, অনিদ্রা, ব্যথা-বেদনায় নিরাময়ী আমলকি গুড়া অনেক উপকারী।

নিরাময়ী আমলকি গুড়া

১৩. ব্রঙ্কাইটিস ও অ্যাজমার জন্য আমলকির জুস উপকারী,এক্ষেত্রে নিরাময়ী আমলকি গুড়া ভূমিকা রাখ।

১৪. নিরাময়ী আমলকি গুড়া শরীর ঠাণ্ডা রাখে, শরীরের কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে এবং পেশি মজবুত করে।

১৫. নিরাময়ী আমলকি গুড়া হৃদযন্ত্র, ফুসফুসকে শক্তিশালী করে ও মস্তিষ্কের শক্তিবর্ধন করে। আমলকির আচার বা মোরব্বা মস্তিষ্ক ও হৃদযন্ত্রের দুর্বলতা দূর করে।

১৬. নিরাময়ী আমলকি গুড়া শরীরের অপ্রয়োজনীয় ফ্যাট ঝরাতে সাহায্য করে।

১৭. নিরাময়ী আমলকি গুড়া লোহিত রক্তকণিকার সংখ্যা বাড়িয়ে তুলে দাঁত ও নখ ভাল রাখে।

১৮. আমলকি গুড়ার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান ফ্রি র‌্যাডিকালস প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। সেল ডিজেনারেশনের অন্যতম কারণ এই ফ্রি র‌্যাডিকালস।

১৯. সর্দি-কাশি, পেটের পীড়া ও রক্তশূন্যতা দূরীকরণে নিরাময়ী আমলকি গুড়া বেশ ভালো কাজ করে।

নিরাময়ী আমলকি গুড়া

২০. নিরাময়ী আমলকি গুড়া ব্লাড সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণে রেখে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে । পাশাপাশি কোলেস্টেরল লেভেল কম রাখাতেও যথেষ্ট সাহায্য করে আমলকি গুড়া।

২১. চুল ওঠা দূর করতে নিরাময়ী আমলকি গুড়া বেশ উপকারী ও চুলের খুসকির সমস্যা দূর করে।

২২. নিরাময়ী আমলকি গুড়া কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের উপর কাজ করে।

২৩. নিরাময়ী আমলকি গুড়া  কোষ্ঠকাঠিন্য, মাথাব্যথা, অম্ল, রক্তশূন্যতা, বমিভাব দূর করতে সাহায্য করে।এছাড়া বহুমূত্র রোগ সারাতেও এটি উপকারী।

২৪. এছাড়াও নিরাময়ী আমলকি গুড়া পেটের গোলযোগ ও বদহজম রুখতে সাহায্য করে

২৫. আমলকীর মধ্যে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ক্যান্সার প্রতিরোধী গুণ। গবেষণায় বলা হয়, আমলকি ক্যান্সারের কোষ বৃদ্ধিতে বাধা দেয়।

২৬. নিরাময়ী আমলকি গুড়া শরীরের বিষাক্ত পদার্থ বের করতে সাহায্য করে এবং ওজন কমায়।

২৭. উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আমলকী খুব দ্রুত কাজ করে। নিরাময়ী আমলকীর গুঁড়ো মধু দিয়ে প্রতিদিন খেলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।

২৮. নিরাময়ী আমলকি গুড়া সর্দি-কাশি,পেটের পীড়া,রক্তশূন্যতা দূরীকরণে বেশ ভালো কাজ করে।

৩০. নিরাময়ী আমলকি গুড়ার সাথে মধু এবং ঘি মিশিয়ে ঐ মিশ্রণটি চোখে লাগালে চোখের হলুদ ও ছানি রোগে উপকার পাওয়া যায়।

নিরাময়ী আমলকি

কীভাবে খাবেন?

১. সকালে খালি পেটে আমলকির রস খেতে পারেন যা আপনার জন্য বেশ উপকারি হয়ে উঠবে । তবে রসের পরিমাণ ১০ মিলিগ্রামের বেশি হওয়া উচিত নয় তাহলে এর কার্যরীতা কম হতে পারে। আবার আমলকি রোদে শুকিয়েও খেতে পারেন, অনেকেই আমলকি রোদে শুকিয়ে খেয়ে থাকে। আমলকি ছোট টুকরো করে কেটে তার উপর নুন ও গোলমরিচগুঁড়ো ছড়িয়ে রোদে শুকোতে দিন। শুকিয়ে গেলে কাচের বয়ামে ভরে রাখুন।

২. নিরাময়ী আমলকি গুঁড়ার সঙ্গে সামান্য মধু ও মাখন মিশিয়ে খাওয়ার আগে থেকে পারেন। খিদে বাড়াতে সাহায্য করে। এক গ্লাস দুধ বা পানির মধ্যে আমলকি গুঁড়া ও সামান্য চিনি মিশিয়ে দিনে দু’বার খেতে পারেন। অ্যাসিডিটির সমস্যা কম রাখতে সাহায্য করবে।

নিরাময়ী আমলকি

যাদের খাওয়া উচিত নয় আমলকি

• গর্ভবতী মহিলাদের আমলকি গুড়া উচিত নয়। আমলকিতে এমন অনেক প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান পাওয়া যায়,যা শরীরের জন্য উপকারী। তবে বেশি পরিমাণে খেলে পেট খারাপ হতে পারে।

নিরাময়ী আমলকি

• যাতের শিগ্রহী অস্ত্রপাচার হয়েছে তাদের আমলকি গুড়া এড়িয়ে চলা উচিত।
• যাহারা ডায়বেটিসে আক্রান্ত তারা এটিকে এরিয়ে চলাই ভালো। যাদের রক্তে শর্করার মাত্রা কম থাকে তাদের জন্যও আমলকি গুড়া ভালো নয়।